Connect with us

Religion

বিভিন্ন নফল নামাজ ও নফল নামাজের ফজিলত

বিভিন্ন নফল নামাজ ও নফল নামাজের ফজিলত

বিভিন্ন ধরনের নফল নামাজ আছে এবং এই নফল নামাজের ফজিলত গুলো এক এক ধরনের। উল্লেখযোগ্য নফল নামাজ গুলো হচ্ছে – তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ, দুখলুল মদজিদ নামাজ, চাশতের নামাজ, আওয়াবিনের নামাজ, তাহাজ্জুদের নামাজ, ইশরাকের নামাজ অন্যতম। এছাড়াও সালাতুল কুসুফ ও খুসুফ নামাজ, সালাতুত তাওরা নামাজ, সালাতুস শোকর নামাজ, সালাতু কাজায়িদ দাঈন বা ঋন পরিশোধের নামাজ, সালাতুল হাজাত নামাজ, সালাতুত তাসবিহ নামাজ নফল নামাজ। এই নফল নামাজগুলোর কোনটা পড়তে হয় সূর্য উদিত হওয়ার পর, কিছু নফল নামাজ আছে সকাল ৯ থেকে ১১.৩০টার মধ্যে পড়তে হয়, মাগরিবের নামাজের পর নফল নামাজ পড়তে হয়। এই বিভিন্ন নফল নামাজের ফজিলত বিভিন্ন। আজ আমরা জানব নফল নামাজ কখন পড়তে হয়, নফল নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত, নফল নামাজ কি বসে পড়তে হয়, ৪ রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ম, নফল নামাজের সূরা।

আসুন জেনে নেই বিভিন্ন ধরনের নফল নামজ ও এই নফল নামাজগুলোর ফজিলত সম্পর্কে

বিভিন্ন নফল নামাজ ও নফল নামাজের ফজিলত

মানুষকে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন, আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য। (সুরা আন নাজিয়াত)। এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে আল্লাহ্‌ মানব জাতিকে তাঁর ইবাদত ও অনুগত্য করার জন্য সৃষ্টি করেছেন।

তাঁর মানে আমাদের একমাত্র তাঁর ইবাদত করতে হবে। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ্‌তালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে মহাসাফল্য লাভ করল’ (সূরা আল-আহজাব : ৭১)।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে আমাদের ফরজ ইবাদতের প্রতি বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ঠিক তেমনি এই ফরজ ইবাদতগুলোর ঘাটতি পুরনের জন্য নফল ইবাদতের কোন জুড়ি নেই।

তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির আশার বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রোজাও রাখতে হবে।

বিভিন্ন নফল নামাজ ফজিলত

নফল নামাজ

আমাদের ফরজ ইবাদতগুলো পালন করতেই হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর বেশি কাছাকাছি বা তাঁর রহমত লাভের আশায় আমাদের বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ও করতে হবে। বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত নামাজগুলো ছাড়া বাকি নামাজগুলোকে আমরা নফল নামাজ বলতে পারি।

নফল নামাজের কোন সীমা বা পরিসীমা নাই। ইচ্ছামত এই নফল নামাজগুলো পড়া যায়। যে যত বেশি নফল নামাজ পড়বে সে তত বেশি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবে। মহানবী সা: বলেছেন, ‘রমজান মাসের নফল নামাজ অন্য মাসের ফরজের সমতুল্য’।

নফল নামাজের নিয়ত

বেশিরভাগ নফল নামাজগুলো সুন্নত। তাই নিয়তের সময় সুন্নত বা নফল দুইটিই বলা যাবে। আরবি বা বাংলা এই পদ্ধতিতেই নিয়ত করা যাবে। কারন আল্লাহ্‌ আমাদের মন বুঝতে পারেন। তাই বাংলায়ও নিয়ত করতে পারবেন। আর আপনি নামাজের জন্য দাঁড়ালে যে নিয়তে নামাজ পড়ছেন আল্লাহ্‌ তা বুঝতে পারেন তাই, নিয়ত শুধু আরবিতেই করতে হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। নফল নামাজের নিয়ত করে, কোন কারনে নামাজ ছেড়ে দিতে হলে পরে এই নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।

নফল নামাজে কি কি সুরা পড়বেন

ফরজ নামাজগুলোতে আমরা যেভাবে ধারাবাহিকভাবে সবকিছু করি নফল নামাজের ক্ষেত্রেও তাই করতে হবে।
নফল নামাজের ক্ষেত্রে আলাদা কোন নিয়ম নাই এবং সুরার ধারাবাহিকতার ও প্রয়োজন নাই।
নফল নামাযে সুরা কেরাত নিরবে পড়তে হয় এবং রাতের বেলা সামান্য আস্তে পরলে কোন সমস্যা নেই।

আসুন কিছু নফল নামাজ ও এর ফজিলতের সাথে পরিচিত হই

১. তাহিয়্যাতুল ওজু নামাজ

অজু করার পর কারো সাথে কোন প্রকার কথাবার্তা না বলে, অজুর পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব।
তবে এই তাহিয়্যাতুল অজু খ্যাত এই নামাজটি দুই বা চার রাকাত পড়া যায়।

তাহিয়্যাতুল ওজু নামাজের ফজিলত 

মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে ব্যাক্তি অজু করার পর খুবই আন্তরিকতার সাথে দুই রাকাত নামাজ পড়বে তাঁর জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম)
নবীজি সাঃ মেরাজ থেকে আসার পর বেলাল রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল তুমি এমন অতিরিক্ত কি আমল কর যে, আমি জান্নাতে
তোমার পায়ের জুতার শব্দ পেলাম? রাসুল সাঃ এর প্রশ্ন শুনে বেলাল কিছুটা চিন্তা করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাঃ আমি অতিরিক্ত শুধু
একটি আমলই করি সেটি হচ্ছে অজু করার পর, আমি কারো সাথে কথা না বলে এবং
অজুর পানি শুকানোর আগে আমি দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ পড়ি। জবাবে রাসুল সাঃ বলেন, এই নামাজ তুমি কখনো ছেড়ো না।

২. দুখলুল মসজিদ নামাজ

মসজিদে প্রবেশের পর না বসে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া কেই দুখলুল মসজিদের নামাজ বলে।
রাসুল সাঃ বলেছেন, তোমরা মসজিদে ঢুকেই বসে পরো না। দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু বা দুখলুল মসজিদের নামাজ আদায় করার পর বসবে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়া ভালো এবং প্রতিবারই দুখলুল মসজিদ নামাজ পড়া যাবে।
এবং জুম্মার নামাজের ক্ষেত্রেও একই ভাবে দুখলুল মসজিদ নামাজ পড়া যাবে।
তবে, ফজরের সময় হওয়া থেকে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত সব ধরনের নফল নামাজ পড়া মাখ্রুহ। তাই এই সময়ে ঘরে ও মসজিদে কোন প্রকার নফল নামাজ পড়া যাবে না। তবে ফজরের সুন্নত নামাজের সময় দুখলুল মসজিদ নামাজের নিয়ত করে পড়লে এই নামাজের সোয়াব আমরা পাব। (সুনানে আবু দাউদ, ফাতহুল কাদির)।

৩. চাশতের নামাজ

চাশতের নামাজ দুই রাকাত থেকে বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।
এই নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে গরমকালে সকাল ৯টা থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত আর শীতকালে সকাল ১০টা থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত।

চাশতের নামাজের ফজিলত

চাশতের নামাজের গুরুত্ব বুঝনোর জন্য নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, যে ব্যাক্তি খুব যত্ন সহকারে দুই রাকাত চাশতের নামাজ
আদায় করবে, আল্লাহ্‌ তাঁর সব গুনাহ মাফ করে দিবেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমপরিমাণ হয়। (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)
রাসুল সাঃ আরও বলেন, যে ব্যক্তি চাশতের ১২ রাকাত নামাজ খুবই আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে পড়বে,
মহান আল্লাহ্‌ সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি স্বর্ণের ঘড় নির্মাণ করবেন। (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

৪. আওয়াবিন নামাজ

আওয়াবিন নামাজ পড়তে হয় মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার পর। আওয়াবিন নামাজ দুই রাকাত করে ৬ থেকে ২০ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।

আওয়াবিন নামাজের ফজিলত

নবি করীম সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায়ের পর দুই রাকাত করে মোট ছয় রাকাত আওয়াবিনের নামাজ আদায় করল এবং কারো সাথে ফালতু কথায় লিপ্ত হলো না, আল্লাহ্‌ ঐ ব্যক্তিকে ১২ বছরের ইবাদতের সম পরিমাণ সওয়াব দেন। (তিরমিজি)।

৫. তাহাজ্জুদের নামাজ

তাহাজ্জুদের নামাজ নফল নামাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ নামাজ। পবিত্র কোরআনে এই নামাজের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাসুল সাঃ কে এই নামাজ আদায় করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘এবং আপনি রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়–ন। তা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। নিশ্চয়ই আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে) প্রতিষ্ঠিত করবেন’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)।
রাসুল সাঃ নিয়মিত এই নামাজ পড়তেন এবং তাঁর সাহাবিদের এই নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত থেকে আট রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী সাঃ বলেছেন, ফরজ নামাজগুলোর পরে সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ ( সহিহ মুসলিম)। রাসুল সাঃ আরও বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যবস্থাপনা করো, এটা হচ্ছে নেক লোকের স্বভাব। এটা তোমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে, গুনাহগুলো মিটিয়ে দেবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে’ (সহিহ মুসলিম, আহমদ)।

৬. ইশরাক নামাজ

সূর্য উঠার ১৩-১৫ মিনিট পর যে নামাজ পড়া হয় তাকে ইশরাকের নামাজ বলে। এই নামাজ দুই রাকাত থেকে চার রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়।
ফজরের নামাজ পড়ার পর সূর্য উঠা পর্যন্ত কারো সাথে কোন প্রকার কথা না বলে জিকির করা।
এবং সূর্য উঠার ১৩-১৫ মিনিট পর দুই বা চার রাকাত ইশরাকের নামাজ আদায় করা। মসজিদে অথবা ঘরে।

ইশরাকের নামাজের ফজিলত

রাসুল সাঃ ইশরাকের নামাজের ফজিলত বর্ণনা করে বলেছেন, আল্লাহ বলেন, হে মানুষ! তুমি দিনের প্রথমাংশে আমার জন্য চার রাকাত নামাজ আদায় করো।
তাহলে এ দিনে তোমার যা কিছু প্রয়োজন হয়, সবই আমি পূরণ করে দেবো। (তিরমিযি)।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকে এবং আল্লাহর নামে জিকর-আজকার করতে থাকে, এরপর আকাশে সূর্য ভালোভাবে উদয় হলে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সেই ব্যক্তি এক হজ ও ওমরা আদায়ের সওয়াব পাবে’ (তিরমিযি)।

এই নফল নামাজগুলো ছাড়াও আরও কিছু নফল নামাজ আছে সেগুলো হল

সালাতুল কুসুফ ও খুসুফ নামাজ, সালাতুত তাওরা নামাজ, সালাতুস শোকর নামাজ,
সালাতু কাজায়িদ দাঈন বা ঋন পরিশোধের নামাজ, সালাতুল হাজাত নামাজ, সালাতুত তাসবিহ নামাজ

আমাদের সামাজিক মাধ্যমগুলো

[su_button url=”https://twitter.com/GirlWorld24″ target=”blank” background=”#2de6ef” color=”#000000″ radius=”round” icon=”icon: twitter”]টুইটার[/su_button] [su_button url=”https://www.facebook.com/GirlWorld24/” target=”blank” background=”#2d45ef” color=”#ffffff” radius=”round” icon=”icon: facebook-f”]ফেসবুক[/su_button]


[su_box title=”আরও পড়ুন” style=”glass” box_color=”#000000″ title_color=”#ffffff” radius=”20″][su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”3″ order=”desc” orderby=”rand” ignore_sticky_posts=”yes”][/su_box]


A professional SEO specialist, content writer, video editor, and graphic designer.

Trending