খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী | রাসুল (সাঃ) এর প্রথম স্ত্রী

হযরত খাদিজা (রাঃ) (৫৫২৬১৭ খ্রিস্টাব্দ) এর জীবনী

বিবি খাদিজা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী | মা খাদিজা রাঃ “তাহিরা বা পবিত্র” নামে খ্যাত ছিলেন মক্কা নগরীতে।
আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ সাঃ ভীষণ কেঁদেছিলেন খাদিজা রাঃ মৃত্যুর সময় এবং আমাদের নবীজি সাঃ অনেক একা হয়ে যান।
এর কারন হচ্ছে খাদিজা রাঃ ইন্তেকালের কিছুদিন আগেই চাচা আবু তালিব এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যান।
খুব দ্রুত প্রিয় দুইটি মানুষ তাঁর জীবন থেকে চলে যাওয়ায় তিনি ঐ বছরটিকে শোকের বছর হিসেবে ধরে নিতেন।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ প্রথম স্ত্রী খাদিজা রাঃ জন্মগ্রহন করেন মক্কাতে। খাদিজা রাঃ নাম মক্কাতে ছিল তাহিরা, যার অর্থ পবিত্র।

মা খাদিজা যখন ইন্তেকাল করেন নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাঃ কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, আমার খাদিজা ছিল অতুলনীয়।
সবাই যখন আমাকে ছেড়ে চলে গেছে খাদিজা আমাকে ছেড়ে যায় নি, আমি তাঁর কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছি সব সময়।
খাদিজা আমাকে তাঁর অর্থ ও সম্পদ দিয়ে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সাহায্য সহযোগিতা করেছে।

হযরত খাদিজা (রাঃ) মক্কার কোরাইশ বংশের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

কিন্তু মা হযরত খাদিজা (রাঃ) খুবই সাধারন জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। খাদিজা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন।
ইসলাম ধর্ম আসার আগে তিনি হযরত ইব্রাহিম আঃ এর ধর্ম পালন করতেন। তখন আরবে হযরত খাদিজা (রাঃ) ছিলেন অত্যন্ত দানশীল।
দান করার ক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না। খাদিজা রাঃ ছিলেন হিজাজের অনেক বড় মাপের একজন মহিলা ব্যবসায়ী।
হযরত খাদিজা (রাঃ) আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করতেন এবং তাঁর এটার প্রতি অনেক বেশি ঝোঁক ছিল।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে হযরত মুহাম্মদ সাঃ একদিন আসবেন এবং তিনি আমাদের নবীজি সাঃ জন্য অপেক্ষা করতেন।
তাই তিনি মাঝে মধ্যে আরবের সবচেয়ে বড় বড় ধর্মযাজকদের নবীজির আগমনের বা নবীজির আগমনের নিদর্শন সম্পর্কে জানতে চাইতেন।

হয়তো হযরত খাদিজা (রাঃ) এই আগ্রহের জন্যই মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন রাসুল সাঃ এর নবুয়াতের আগেই খাদিজা রাঃ সাথে প
রিচয় ঘটিয়ে দেন এবং রাসুলুল্লাহ সাঃ কে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে পাঠান।

আরও পড়ুন

  1. বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
  2. সালাম ফেরানোর আগে যে দোয়া পড়লে গোনাহ মাফ হয়
  3. বিভিন্ন নফল নামাজ ও নফল নামাজের ফজিলত
  4. মনের আশা পূরণ হওয়ার দোয়া

খাদিজা (রাঃ)  মুগ্ধ হন নবীজির (সাঃ) প্রতি

আমাদের নবীজির সাঃ এর উত্তম গুণাবলী এবং তাঁর আমানতদারিতা খাদিজার রাঃ কাজে অনেক ভালো লাগে।
মা খাদিজা বুঝতে পারেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন আরবের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও সৎ একজন পুরুষ।

তিনি আরও বুঝতে পারেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের অধিকারের ক্ষেতে খুবই সচেষ্ট।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এইসব গুণাবলীর জন্য তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চাচা আবু তালিবের কাছে বিহাবের প্রস্তাব পাঠান।
চাচা আবু তালিব সবকিছু বিবেচনা করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সম্মতি নিয়ে বিবাহে রাজি হন।
এরপর থেকেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং খাদিজা রাঃ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবনের যাত্রা শুরু করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স তখন ছিল ২৫ এবং খাদিজা রাঃ বয়স ছিল তখন ৪০।

রাসুল সাঃ এর সাথে বিয়ে হলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিবি খাদিজা রাঃ কে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন এইটা খাদিজা জানতেন।

কিন্তু তখনকার আরব সমাজ এই বিয়েটা সহজভাবে নিতে পারে নাই।

কারন সেই অন্ধকার যুগে সবকিছু মাপা হতো ধনসম্পত্তির উপর ভিত্তি করে।

কিন্তু আমাদের নবীজির অর্থ সম্পদ কিছুই ছিল না।

অপরদিকে মা খাদিজার অঢেল সম্পত্তি ছিল। তাই সমাজে সবাই নাক ছিটকাতে থাকে।

অনেকেই বিবি খাদিজা বলতে থাকে তুমি কেন এত দরিদ্র একটি ছেলেকে বিয়ে করতে গেলে।

বিবি খাদিজা রাঃ এর উত্তরে বলতেন, “এই সমাজে মুহাম্মদ (সাঃ)-র মতো আর কেউ কি আছে?
তার মতো সচ্চরিত্রবান ও মর্যাদাবান দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে কি তোমরা চেন?
আমি তার সৎ গুণাবলীর কারণেতাকে বিয়ে করেছি।”

কিন্তু তখনকার সমাজ বিবি খাদিজার এই যুক্তি বুঝেনি।

আর তাই আরবের অনেকেই বিবি খাদিজার সাথে শত্রুতা শুরু করে দেয়।

আর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়াতের পর এই শত্রুতা আরও বেড়ে যায়।

বিবি খাদিজার প্রতি শত্রুতার এতো পরিমাণেই বেড়ে যায় যে, তিনি যখন সন্তান প্রসব করেন কেউ তাকে সাহায্য করে নাই।

মোট কথা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বিয়ে করার কারনে তিনি তখনকার সমাজ থেকে একেবারে বিছিন্ন হয়ে পড়েন।

কিন্তু মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন খাদিজার রাঃ একাকীত্ব দূর করে দেন

এবং তাঁর সন্তান প্রসবের সময় মহান আল্লাহ্‌ পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলাদের পাঠিয়েছিলেন তাকে সাহায্য করার জন্য।

খাদিজা রাঃ অনেক সম্পদের মালিক হলেও তাঁর ব্যবহার ছিল খুবই পরিমার্জিত ও ভারসাম্যপূর্ণ।

খাদিজা রাঃ ভিতর কোন ধরনের অহংকার বা দেমাগ কিছুই ছিল না।

তিনি সর্বদা রাসুল সাঃ প্রতি ও তাঁর ইবাদতের প্রতি আগ্রহি ছিলেন।

তাই বিবি খাদিজা রাঃ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটে এমন কিছুই করতেন না।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন নবুয়াত প্রাপ্ত হলেন তখন নবীজির আত্মীয়-স্বজন নবীজিকে ত্যাগ করে
কিন্তু খাদিজা রাঃ নবীজির সাথে আঠার মত লেগে ছিলেন।

তাকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। নবীজির ধর্মকে তিনি কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই গ্রহণ করেন এবং ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেন প্রথম।

তিনি শুধু মুখে মুখে তাঁর স্বামীর ধর্ম ইসলামকে গ্রহণ করেন নি খাদিজার যত অর্থ সম্পদ ছিল সব নবীজি সাঃ কে দিয়ে দিয়েছিলেন ইসলাম এর প্রচার ও প্রসারের জন্য।

মুসলিমরা যখন ইসলামের প্রথম যুগে শোয়াবে আবু তালিব নামক উপত্যকায় অবরুদ্ধ ছিল।

তখন বিবি খাদিজা রাঃ তাঁর অর্থ সম্পদ দিয়ে মুসলমানদের টিকিয়ে রেখেছিলেন আল্লাহর ইচ্ছায়।

খাদিজা রাঃ ছিলেন অনেক ধৈর্যশীল মহিলা এবং অনেক বিচক্ষন।

শত বাধা ও প্রতিকুলতার মধ্যে তিনি মানবতার মুক্তির দূত রাসুল সাঃ এর প্রতি ছিল তাঁর অগাদ বিশ্বাস ও আস্থা।

আর তাই তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মান মর্যাদার প্রতি ছিলেন সদা সচেষ্ট।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যদি কোন কারনে মন খারাপ থাকতো খাদিজা রাঃ নিজের সবটুকু দিয়ে
চেষ্টা করতেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ও তাঁর মন ভালো করার।

তিনি সব কাজে রাসুল সাঃ কে উত্তম পরামর্শ দিতেন। বিবি খাদিজা রাঃ ছিলেন রাসুল সাঃ এর যোগ্য পরামর্শক ও উপদেস্টা।

মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে হেশাম লিখেছেন, হযরত খাদিজা রাসূলের প্রতি ঈমান আনেন।

রাসূলের বক্তব্যকে সমর্থন করেন এবং তাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা দেন।

আল্লাহতায়ালা হযরত খাদিজার মাধ্যমে রাসূলকে প্রশান্তি দিতেন।

রাসূলের কানে কখনোই দু:সংবাদ পৌছানো হতো না যতক্ষণ না পর্যন্ত আল্লাহ খাদিজার মাধ্যমে ঐ খবর শ্রবনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতেন।

ইতিহাস সাক্ষি রাসুল সাঃ কে একদল লোক পাথর নিক্ষেপ করতে করতে খাদিজার বাড়ি পর্যন্ত চলে
আসে এবং বিবি খাদিজার বাড়িতেও পাথর নিক্ষেপ করে।

বিবি খাদিজা রাঃ বাড়ি থেকে বের হয়ে মক্কার কাফির মুশরিকদের তীক্ষ্ণ ভাষায় বলেন, “লজ্জা করেনা তোমরা তোমাদের বংশের সবচেয়ে মহানুভব মহিলার ঘরে পাথর নিক্ষেপ করছো? এর ফলে তারা লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়।

খাদিজা রাঃ নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিজের সবটুকু দিয়ে সেবা করতে থাকেন।

ঠিক ঐ সময় মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে নবীজির কাছে বিবি খাদিজা রাঃ

কে আল্লাহর সালাম ও উত্তম পুরস্কারের সুসংবাদ পৌঁছিয়ে দেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বিবিকে বলেন,

খাদিজা আল্লাহ্‌ তোমাকে বেহেশতের মধ্যে কারুকার্যখচিত একটি বিরাট অট্রালিকা দিবেন

এবং সেখানে কোন দুঃখ-কষ্টের অস্তিত্ব থাকবে না।

খাদিজা রাঃ অনেক আরাম আয়েশে বড় হয়েছিলেন।

কিন্তু যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য মুসলমানরা অবরোধের স্বীকার হন তখন বিবি খাদিজা রাঃ অনেক অনেক কষ্ট স্বীকার করেছিলেন হাসিমুখে।

নিজের সব ধনসম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিলেন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য।

কিন্তু কখনো তিনি তাঁর কষ্ট প্রকাশ করেন নাই। ইসলামের জন্য তাঁর প্রিয় স্বামী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জন্য সব কিছু তিনি সহ্য করেছিলেন।

শোয়াবে আবু তালিব নামক উপত্যকায় অবরুদ্ধ থাকার কারনে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পরেন।

বিবি খাদিজা রাঃ স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায় এবং তিনি মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যান।

মৃত্যুর সময় খাদিজা রাঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
“হে রাসূল আমি আপনার সব অধিকার পরিপূর্ণ ভাবে রক্ষা করতে পারিনি, আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

  • হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা (রাঃ) ৬১৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই রমজান ৬৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

OUR SOCIAL PLATFORM

  1. Twitter 
  2. Facebook